বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০১ অপরাহ্ন
গীবত, পরনিন্দা ও পরচর্চা এবং এর পরিণামঃ পবিত্র কুরআন থেকেঃ • তোমরা একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা (গীবত) করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভ্রাতার গোশত ভক্ষণ করতে চাইবে? বস্তুতঃ তোমরা তো এটাকে ঘৃণাই কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ তাওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু। (সূরা হুজুরাত-৪৯/১২)
• যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হইয়ো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সূরা বনী ইসরাইল-১৭/৩৬)
সহিহ হাদিস থেকেঃ
১. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! গীবত কি? তিনি বলেনঃ তোমার ভাই সম্পর্কে (তার অনুপস্থিতে) এমন কিছু বলা, যা শুনলে সে ব্যথিত হয়। তখন বলা হয়ঃ আমি যে কথা বলি, তা যদি তার মধ্যে থাকে? (তবে কি গীবত হবে?) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি যা বলছো, তা যদি তার মধ্যে থাকে, তবে তুমি তার গীবত করলে; আর সে দোষ যদি তার মধ্যে না থাকে, তবে তো তুমি তার উপর বুহতান বা অপবাদ দিলে। (যা গীবত থেকে অধিক দোষণীয়)। (আবূ দাউদ-৪৭৯৮, ৪৮৭৪, তিরমিযী-১৯৩৪)
২. একদা ‘আয়িশা (রাঃ) স্বাফিয়্যাহ্ (রাঃ) এর পেছনে তার শারীরিক খর্বাকৃতির ব্যাপারটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে তুলে ধরলে তিনি তাঁকে বলেন: তুমি এমন কথা বললে যা এক সাগর পানির সাথে মিশালেও তা মিশে যাবে বরং তা বাড়তি বলেও মনে হবে। (সংক্ষেপিত) (আবূদাউদ-৪৮৭৫, তিরমিযী-২৫০২)
৩. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মি‘রাজের রাতে আমি এমন এক কওমের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম যাদের নখগুলো তামার তৈরী এবং তা দিয়ে তারা অনবরত তাদের মুখমন্ডলে ও বুকে আঁচড় মারছে। আমি বললাম, হে জিবরীল! এরা কারা? তিনি বললেন, এরা সেসব লোক যারা মানুষের গোশত খেতো (গীবত করতো) এবং তাদের মানসম্মানে আঘাত হানতো। (আবূ দাউদ-৪৮৭৮)
৪. আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি জান, দেউলিয়া কে? তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের মধ্যে দেউলিয়া হচ্ছে সেই ব্যক্তি যার দিরহামও (নগদ অর্থ) নেই, কোন সম্পদও নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে সেই ব্যক্তি হচ্ছে দেউলিয়া যে কিয়ামাত দিবসে নামায, রোযা, যাকাতসহ বহু আমল নিয়ে উপস্থিত হবে এবং এর সাথে সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত (হত্যা) করেছে, কাউকে মারধর করেছে ইত্যাদি অপরাধও নিয়ে আসবে। সে তখন বসবে এবং তার নেক আমল হতে এ ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে, ও ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে। এভাবে সম্পূর্ণ বদলা (বিনিময়) নেয়ার আগেই তার সৎ আমল নিঃশেষ হয়ে গেলে তাদের গুনাহসমূহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (তিরমিযী-২৪১৮, রিয়াযুছ ছালেহীন-২২৩)
৫. আবূ হুরাইরাহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহতে ও আখিরাতের দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। যে আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে জ্বালাতন না করে। যে লোক আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, অথবা চুপ থাকে। (বুখারী-৬০১৮)
৬. আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তারা (সাহাবাগণ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), ইসলামে কোন্ জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেনঃ যার জিহবা ও হাত হতে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে। (বুখারী-১১, তিরমিযী-২৬২৮, নাসাঈ-৪৯৯৯)
৭. আবূদ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক তার কোন ভাইয়ের মান-সম্মানের উপর আঘাত প্রতিরোধ করে, কিয়ামাত দিবসে আল্লাহ তা’আলা তার মুখমণ্ডল হতে জাহান্নামের আগুন প্রতিরোধ করবেন। (তিরমিযী-১৯৩১)
আসুন আমরা জিহ্ববাকে সংযত রাখি এবং অনুমান নির্ভর কথা বলা থেকে দূরে থাকি। কারণ মহান আল্লাহ বলেন “মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে (তা লিপিবদ্ধ করার জন্য) তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে” (সূরা ক্বাফ ৫০/১৮)।